1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

বাধা পেরিয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছে নারী ফুটবলার তৃষ্ণা-মিতু

  • Update Time : সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩
  • ৬৫ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক: মিতু ও তৃষ্ণা দুই বান্ধবী ও সতীর্থ পড়ন্ত বিকেলে পাথরাজ সরকারি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলার অনুশীলন করছিল। পঞ্চগড়ের এ নারী দুই ফুটবলার এখন জাতীয় দলে খেলছে। বাধার গন্ডি পেরিয়ে গ্রামের মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠে খেলছে ওরা। এ খেলার মধ্য দিয়ে নিজেদের জাতীয় নারী ফুটবলার হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে, তেমনি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়কেও চিনিয়ে দিচ্ছে বিভিন্নভাবে। খেলার সুবাধে ঢাকায় থাকে তারা। সম্প্রতি বাড়িতে আসলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের। 

তৃষ্ণা ও মিতুর বাড়ি জেলার বোদা উপজেলার। বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মিতু বোদা পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার রব্বানীর মেয়ে ও তৃষ্ণা রানী রায় একই পৌরসভার ভাসাইনগর এলাকার উমের রায়ের মেয়ে।

ছোট বেলা থেকেই খেলাধূলার আগ্রহ ছিল খুব। খেলতে ঘর থেকে বাইরে বের হলেও মানুষজনের মুখ থেকে শুনতে হতো নানা কটু কথা। মেয়েদের ফুটবল খেলে কী হবে, কী লাভ এমন সব সমালোচনা সহ্য করেও এখন হয়ে উঠেছেন এ জেলার নারী ফুটবলার। এটা সম্ভব হয়েছে বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের মাধ্যমে। সমাজের নিন্দুকদের কট্টর সমালোচনা সহ্য করেই নারী ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলেছেন তৃষ্ণা-মিতুকে।

তৃষ্ণা ও মিতু অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের খেলার সুযোগ পায় ২০২২ সালে। সে বছর ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) মৌখিকভাবে তাদেরকে ট্রায়ালের জন্য ঢাকায় ডাকা হলে ২৬-২৭ অক্টোবর ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয় তারা। এরপর অনুর্ধ্ব ১৭ জাতীয় দলে ফুটবল খেলে তারা। জাতীয় দল থেকেই দেশের মাটিতে ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিপক্ষে খেলে তারা। সেখানে দুটিতে রানার্স-আপ অর্জন করে। এরপর দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে খেলে এ নারী দুই ফুটবলার।

একাডেমির খেলোয়াড়েরা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ক্লাব ও বিকেএসপিতে অবস্থান করছেন। তবে বালক খেলোয়াড় দলের চেয়ে প্রমীলা দল নিয়ে বেশি চমক সৃষ্টি হয়েছে। জেএফএ কাপসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ একাডেমির প্রমীলা খেলা করছেন। বিপুলের এই একাডেমিতে বর্তমানে বালক ও প্রমীলা মিলে প্রায় দুই শতাধিক খেলোয়াড় রয়েছেন। একাডেমি থেকে তারা জাতীয়-স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।

নুশরাত জাহান মিতু বলেন, ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। কিন্তু মেয়ে বলে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তারপরেও সেসব সহ্য করে বিপুল স্যারের মাধ্যমে আজকে গ্রামের মাঠ থেকে জাতীয় অঙ্গনে খেলছি। ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও খেলেছি আমরা। এর সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রশিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক ও ক্রীড়ামোদী মানুষের উৎসাহের জন্য। আমি যদি আরও ভালো জায়গায় যেতে পারি, যেসব মেয়েরা ফুটবল খেলোয়ার হতে চান, তাহলে আমি এ একাডেমিতে সময় দিয়ে তাদেরকে শিখিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।

তৃষ্ণা রানী রায় বলেন, ফুটবল খেলাটা খুব সৌখিন খেলা। আমার খুব স্বপ্ন ছিল যে আমি একজন ভালো খেলোয়ার হব। সে স্বপ্ন ধরেই আমি বোদা ফুটবল একাডেমিতে আসলে বিপুল স্যার আমাকে জায়গা করে দেন। মেয়েরা খেলবে এটা নিয়ে অনেক ধরণের কটু কথা শুনতে হয়েছে। তারপরেও সে স্থান থেকে আমাদেরকে নারী ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলেছেন এ মানুষটি। আমি এ বোদা ফুটবল একাডেমি থেকেই জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছি। জাতীয় দল থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছি ও দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরেও খেলেছি। আমার পরিবার, স্কুলের শিক্ষকরা সহযোগিতা করেছিল বলেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

নুসরাত জাহান মিতুর বাবা রব্বানী বলেন, ছোট থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল মেয়ের। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল মিতুর। তাই পরিবার থেকে সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। আজ মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এ স্বপ্নজয়ের পথে কত কটু কথা শুনতে হয়েছে আমার মেয়েকে। একই কথা জানান তৃষ্ণা রানী রায়ের বাবা উমেরও।

বোদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও একাডেমির উপদেষ্টা রবিউল আলম সাবুল বলেন, মেয়ে দু’টি আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আজ মিতু ও তৃষ্ণা জাতীয় দল থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলছে। তাদের এ অর্জন আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক সুনামের। আমরা চাই মিতু-তৃষ্ণার মতো আমাদের জেলার আরও খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাক। এদিকে প্রশিক্ষক বিপুলের চেষ্টাও কম ছিল না। তার এসব কাজে সার্বক্ষণিক আমি সহযোগিতা করেছি।

প্রশিক্ষক মোফাজ্জ্বল হোসেন বিপুল জানান, বোদা ফুটবল একাডেমি গড়ে তুলি ২০১৬ সালে। এখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। প্রথমে আমরা মেয়েদেরকে নিয়ে খেলাধুলা শুরু করি। বিশেষ করে মেয়েদেরকে নিয়ে খেলাধুলা শুরু করতে গিয়ে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি সাহস না হারিয়ে এগিয়ে গিয়েছি। আজ তৃষ্ণা ও মিতু জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছে। তাদের দেখে স্থানীয় অনেক মেয়েরা ফুটবল খেলতে একাডেমিতে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের একাডেমিতে এখন ৩৫ জন মেয়ে ও ১০০ জন ছেলে ফুটবলার হয়ে উঠছে।  মিতু-তৃষ্ণা জাতীয় দলে খেলছে। তাদের এগিয়ে নিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতা ছিল। তারা সহযোগিতা না করলে আমি তাদের এ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারতাম না।

জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার বলেন, আসলে তৃষ্ণা ও মিতু তৃণমূল এলাকা বোদা থেকে উঠে এসেছে সত্যিই এটা গর্বের।  এটা শুধু পঞ্চগড় জেলা নয়, গোটা বাংলাদেশের জন্য সুনাম অর্জন করেছে। ওরা দেশের বাইরেও খেলেছে। ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলবে এমনটাই প্রত্যাশা করি। সর্বোপরী জেলা ক্রীড়া সংস্থা ওদেরকে আগে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে ভবিষ্যতেও করবে। এরকম যারা তৃণমূল পর্যায়ে যারা নারী ফুটবলার রয়েছে, তাদেরকেও এগিয়ে নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..